বাছুরের কৃমিরোগ

              বাছুরের কৃমিরোগ
              Calf worm diseases

অনেকেই মনে করে, দুধ খাওয়া বাছুরের কৃমি হয় না, বিধায় বাছুরকে কৃমিনাশক ঔষধ খাওয়ানো থেকে বিরত থাকে। কিন্তু আপনারা কি জানেন, বাছুরের কৃমি রোগ একটি মারাত্নক রোগ। যার ফলে প্রতি বছর অনেক বাছুর কৃমিতে আক্রান্ত হয়ে মারা
                     কারণ
>= গাভীকে গর্ভাবস্থায় কৃমিমুক্ত না করলে গর্ভের বাছুর মায়ের পেট থেকে কৃমির ডিম বহন করে।
>= গাভীর প্লাসেন্টার মাধ্যমে লার্ভাযুক্ত ডিম দ্বারা সংক্রামিত হয়।
>= পানি জমে থাকে এবং শামুক বসবাস করে, এমন জমির ঘাস ও জলজ উদ্ভিদের সংগে সারকেরিয়া যুক্ত ঘাস খাওয়ালে।
>= অপরিষ্কার পানি, খাবার, ও খাদ্য পাত্রের মাধ্যমে।
>= কলিজার পাতাকৃমি (Liver fluke) এর কারন Fasciola gigantica নামক কৃমি।
>= রক্তের পাতাকৃমি (Blood fluke) এর কারন Schistosoma nasalis নামক পাতাকৃমি।
>= Rumen fluke এর কারন Paramphistomum cervi প্রজাতির পাতাকৃমি।
>= কেঁচো বা বড় গোল কৃমি (Round worm) এর কারন Neoascaris vitulorum নামক কৃমি।
>= Stomach worm এর কারন Haemonchous contortus, Mecistocirrus digitatus, Trichostrongylus and Cooperia নামক পাকস্থলী কৃমি।
>= Strongyloid গণভুক্ত বিভিন্ন প্রজাতির কৃমি।
>= ফিতা কৃমি (Tape worm) এর কারন Moniezia spp. অন্যতম।
>= Srephanofilaria assamensis নামক প্রজাতির কৃমি।

               ক্ষতির দিকসমুহ

>= কৃমি বাছুরের দেহের পুষ্টি উপাদানে ভাগ বসায় ফলে বাছুর পুষ্টিহীনতায় ভুগে।
>= বাছুরের দৈহিক বৃদ্ধিতে চরম ভাবে বাধাগ্রস্থ করে। হজম শক্তি হারিয়ে ফেলে।
>= খাদ্য পরিপাক ও পুষ্টি শোষনে বাধার সৃষ্টি করে, যার ফলে রক্তশুন্যতার সৃষ্টি হয়।
>= পরবর্তিতে বাছুরের প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস করাসহ দুধ ও মাংশ উৎপাদনও হ্রাস পায়।
>= অন্ত্রনালীতে অনেক সময় কৃমিতে জমাট বেধে ফেলে, যার ফলে খাদ্য চলাচল বন্ধ হয়ে বাছুর মারা যায়।

                        লক্ষন
>= শারীরিক দুর্বলতা ও দিন দিন শুকিয়ে যায়।
>= প্রায়ই মাঝে মাঝে পাতলা পায়খানা ও কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা যাবে।
>= রক্ত ও মিউকাস মিশ্রিত দুর্গন্ধযুক্ত ডায়রিয়া হতে পারে।
>= রক্তস্বল্পতা ও দৈহিক ওজন হ্রাস পায়।
>= বাছুর, গাভীর বাটে মুখ লাগাতে অনিহা প্রকাশ করে।
>= দুধ খেলেও অন্যন্য খাবারের প্রতি তেমন আগ্রহ দেখায় না।
>= পশম উসকো খুসকো হয়ে যায়।
>= বাছুরের পেট ব্যথা অনুভুত হয়।
>= কাশি এবং শ্বাসকষ্ট হতে পারে তবে কোন জ্বর থাকে না।
>= পেট বড় হয়ে যায়।
>= চর্ম রোগ দেখা দিবে।
>= প্রোটিন সংশ্লেষন হয় না বিধায় গলার নিচে পানি জমে থাকতে দেখা যাবে।

                      চিকিৎসা
আক্রান্তের ধরন ও তীব্রতা অনুযায়ী চিকিৎসা দিতে হয়।

পাইপেরাজিন সাইট্রেট গ্রুপের কৃমিনাশক পাউডার। ১০ গ্রাম সমপরিমান/Calf.
                                   অথবা
এ্যালবেন্ডাজল গ্রুপের বোলাস। 7.5mg/kg b.wt

                       অথবা
আইভারমেকটিন গ্রুপের ইন্জেকশন। 1cc/50kg b.wt (SC)
                                    অথবা
নাইট্রোক্সিনিল গ্রুপের ইন্জেঃ। 1.5cc/50kg b. wt (SC)
                                    অথবা
লিভামিসল গ্রুপের বোলাস। 19.5mg/kg b.wt

সতর্কতাঃ ৬ মাস বয়সের নিচে কোন বাছুরকে ট্রাইক্লাবেন্ডাজল গ্রুপের ঔষধ না খাওয়ানোই উত্তম।

                    প্রতিরোধ
>= বাছুর জন্মের ৫-৭ দিনের মধ্যে পাইপেরাজিন সাইট্রেট গ্রুপের Pow: Ascarex 100 or 500mg (ACI) এর ১০ গ্রাম চিটাগুড়ের সাথে মিশিয়ে জিহ্বায় ঘষে দিতে হবে।
>= বাছুর জন্মের প্রথম ৬ মাস বয়স পর্যন্ত, প্রতি মাসে একটি করে Albendazole গ্রুপের টাবঃ যেমন ALMEX vet 600mg (Square) 7.5mg/kg b. wt হিসাবে সকালে খালি পেটে গুড় দিয়ে খাওয়াতে হবে।
>=গর্ভাবস্থায় গাভীকে নিয়মিত ৩-৪ মাস পরপর কৃমিনাশক ঔষধ ব্যবহার করা, যাতে বাচ্চা কৃমিমুক্ত হয়ে জন্মাতে পারে।
>=বর্ষায় জেগে উঠা এবং সকালের ভেজা ঘাস খাওয়ানো যাবে না।
> =শামুকের সংখ্যা হ্রাস বা ধ্বংশ করে।
>= স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশে বাছুর লালন পালন করা।

চলবে

1 comment:

  1. সদ্য জাত বাছুরের ক্ষেত্রে কি করবো?

    ReplyDelete

Powered by Blogger.