চাকরির পরিবর্তে গরু পালন করে স্বাবলম্বী হওয়ার এক বাস্তব গল্প পাবনার এক যুবকের

আমি সবাইকে দেখিয়ে দিতে চাই। লেখা পড়া করে চাকরির পিছনে দৌড়ানোর পরিবর্তে গরু পালন করেও অনেক টাকার মানুষ হওয়া য়ায়। আমি তার দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চাই। কথাগুলো বললেন ডিগ্রী পাস করা ছাত্র রওশন আলম উজ্জ্বল (২৫)। আতাইকুলার সড়াডাঙ্গী গ্রামের আব্দুল বাতেন মাস্টারের ছেলে সে। তার জীবনের লুকিয়ে রাখা ইচ্ছাগুলো পূরণ করতে চায় গরু পালন করে। ইচ্ছাগুলো ইতোমধ্যে বাস্তবায়ন শুরু করেছে সে। ২০০৫ সালে ডিগ্রী পরীক্ষায় উত্তীর্ন হয়ে দরিদ্র ঘরের সন্তান উজ্জ্বল হতাশ হয়ে যায়। এক দিকে তার শারীরিক কাঠামো নাজুক অপর দিকে দারিদ্র্যতা তাকে যেন মাথা উঁচু করে দাড়াতেই দিচ্ছে না। উজ্জল এ বিঘা জমি বিক্রি করে চাকরী পাওয়ার আশায়। অবশেষে কোন চাকরি না জুটলে সেই জমি বিক্রির দেড় লাখ টাকা ও আত্মীয় সজনের কাছ থেকে আরো কিছু টাকা ধার নিয়ে চারটি গরু কিনে লালন পালন আরম্ভ করে। শুরু হয় তার স্বাবলম্বীর অগ্রযাত্রা। ছয় মাস পর গরুগুলি বিক্রি করে দেনা-পাওনা পরিশোধ করে লাভ করে দেড় লাখ টাকা। লাভের টাকা দিয়ে গরু রাখার ঘর তৈরী করে পরবর্তিতে আরো টাকা ধার নিয়ে ১০ লাখ টাকার গরু পালন শুরু করে। গরু গুলো ঢাকা কুরবানীর হাটে বিক্রি করে প্রায় ৫ লাখ টাকা লাভ করে। এভাবে চলতে থাকে তার স্বাবলম্বী হওয়ার ধারাবাহিকতা। এবছর উজ্জ্বলের গরু সংখ্যা বৃদ্ধি হয়ে দাঁড়িয়েছে ১৫ তে। এবার হাটে যে গরুগুলি বিক্রির জন্য নেবে তার একটির দাম হবে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা। যার প্রতিটি গরুর ওজন হবে ২৫ থেকে ৩০ মন। বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যাপারীরা ইতোমধ্যে দাম হাকা শুরু করেছে বাড়ীতেই। এসব গরু লালন পালনের জন্য ইতোমধ্যে দুজনকে বাৎসরিক চুক্তিতে রেখেছে সে। অনেক দাম হওয়ায় গরুগুলো তাদের ট্রাকে করে ঢাকায় ঈদের হাটে বিক্রি করতে হয়। উজ্জ্বল জানায়, বেকার হয়ে ঘুরতে ঘুরতে বাঘাবাড়ীর মিল্ক ভিটার পাশে এক আত্মীয়ের বাড়িতে যায়। বেশ কিছুদিন সেখানে থাকার ফলে গরু পালনের বেশ বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন করে সে। সেই অভিজ্ঞতার আলোকেই উজ্জ্বল শুরু করে লম্বা যাত্রা। যে যাত্রা আজ সফলতার দারপ্রান্তে। এসব গরু পালনে উজ্জ্বল খাদ্য হিসেবে কোন কৃত্রিম খাবার ব্যবহার করে না। প্রকৃতির তৈরী খাবারকেই বেশি প্রধান্য দিয়ে থাকে। গো-খাবারের মধ্যে রয়েছে ভাত, মিষ্টি কুমড়া, আলু সিদ্ধু, গমের ভুষি, খেসারী ভাঙ্গানো, গম ভাঙ্গানো, খৈল ও লবণ। কোন গরু মোটা তাজাকরণ ট্যাবলেট বা পক্রিয়া তার জানা নেই। তিনি বলেন, বড় দুঃখের বিষয় আমি অনেক দামী দামী গরু পালন করলেও প্রাণী সম্পদ অফিস থেকে কোন সহায়তা দেয়া হয়নি। অনেকবার বলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। উজ্জ্বলের পিতাকে তার গরু থেকে বিক্রিত লাভের টাকা দিয়ে এবার হজ্জে পাঠিয়েছে। নিজের জন্য কিনেছে একটি মটর সাইকেল। বাড়ী ঘরকে সাজাচ্ছে নতুন সাজে। সে চায় দেশের সবাই যেন চাকরির পিছনে না দৌড়ায়ে তার মতো গরু পালন করে নিজের পায়ে দাড়ায়। তাহলে দেশ যেমন উপকৃত হবে উপকৃত হবে গোটা সমাজ বেকারত্বের বোঝা থেকে।

No comments

Powered by Blogger.