পশু খামার ব্যবসা শুরুটা করবেন কিভাবে
পশুর খামার ব্যবসায়, শুরুটা করবেন যেভাবে
সভ্যতার শুরু থেকে পশু পালন ছিল মানুষের প্রধান পেশা। যুগে যুগে এই পেশার ধরণ বদলেছে। সারা পৃথিবীতে পশুর খামার ব্যবসা একটি অন্যতম উৎপাদনশীল এবং লাভজনক ব্যবসা।
ভৌগলিক অবস্থানের কারনে বাংলাদেশ পশুর খামার ব্যবসায় উন্নত দেশের তুলনায় অনেক পিছিয়ে। তবে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা এবং বিনিয়োগ সম্ভব হলে আমাদের দেশেও পশুর খামার লাভজনক করা সম্ভব। সত্য বলতে আমাদের দেশে শিক্ষিত কৃষি উদ্যোক্তা খুঁজে পাওয়া যায় না।
আমার কাছে মনে হয় সরকার, সমাজ এবং পরিবার থেকে এই পেশার আধুনিকীকরণের কোন উৎসাহ নেই। বিষয়টা যেন বিধির অমোঘ বিধান, পেশাটি শুধুমাত্র গ্রামের শীর্ণ, দরিদ্র বা আধা শিক্ষিত বেকার তরুণদের জন্য। অবিলম্বে এই ধারণার পরিবর্তন প্রয়োজন।
ভবিষ্যৎ পৃথিবীর অর্থনীতিতে কৃষি উদ্যোক্তা সামনের সারিতে থাকবে তা হলফ করে বলার প্রয়োজন নেই। বাংলাদেশ কৃষির জন্য অনেক সম্ভাবনাময় একটি দেশ।
প্রথমেই মাথায় রাখতে হবে পশুর খামার ব্যবসায় একটি সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। প্রথমে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত প্রাণীসম্পদ তৈরি করতে হবে তারপর সেই সম্পদ থেকে প্রকৃত উৎপাদন শুরু করতে হবে।
সাধারণত ২-৩ বছর একাগ্রতার সাথে ধৈর্য নিয়ে পরিশ্রম করলে ভাল স্টার্ট-আপ করা যায়। জমি চাষ করা থেকে শুরু করে সোনালী ধান ঘরে তোলা পর্যন্ত যে পরিচর্যা ও সময় প্রয়োজন কৃষিক্ষেত্রে কাজের ধরন অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময় এবং শ্রম দিতেই হবে। সুতরাং অসীম ধৈর্য ও সাহস নিয়ে খামার ব্যবসা শুরু করতে হবে। শুরু করার আগে যে বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে তা নিচে পর্যায়ক্রমে বর্ণনা করা হল।
১ #পণ্য_নির্বাচন: আপনার খামার থেকে কি ধরণের পণ্য উৎপাদন করবেন তা নির্ধারণ করতে হবে। অর্থাৎ আপনি ব্রীড, দুধ, মাংস, উৎপাদন করতে পারেন।
তাছাড়া বাই প্রোডাক্ট হিসাবে দুগ্ধজাত পণ্য বা মাংস প্রক্রিয়াজাতকরণ করতে পারেন। যেটাই করুণ আপনাকে একটি নির্দিষ্ট উৎপাদন যোগ্য পণ্য নির্ধারণ করতে হবে এবং সে অনুসারে আপনার খামারের পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে।
২ #বাজার_নির্বাচন: আপনার উৎপাদিত পণ্যের ধরণ অনুযায়ী কোন স্তরের বাজারে বিপণন করবেন তা ঠিক করত হবে। দেশের সামগ্রিক বাজারে চাহিদা আছে অনেক তবে সে অনুপাতে উৎপাদন এবং যোগান দিতে গেলে অনেক বড় বিনিয়োগ নিয়ে নামতে হবে। আমি এখানে মোটামুটি ছোট বিনিয়োগ দিয়ে শুরুটা কিভাবে করা যায় সে বিষয়ে বলতে চাই।
নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য লোকাল মার্কেট নির্বাচন করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে। ব্যবসায় বড় হবার সাথে সাথে আপনার টার্গেট বাজার বড় হতে থাকবে।
৩ #পশুর_জাত_নির্বাচন: খামার শুরু করার জন্য সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল পশুর জাত নির্বাচন। মাথায় রাখতে হবে ভাল জাতের পশুর উপর আপনার খামারে উন্নতি নির্ভর করবে। সেক্ষেত্রে শতভাগ ব্লাড-লাইন সম্পন্ন পশু সংগ্রহ করা সব থেকে উত্তম। তবে এক্ষেত্রে বিনিয়োগ লাগবে অনেক।
খামার করার জন্য ভাল জাতের ৭০-৮০ শতাংশ ব্লাড-লাইন সম্পন্ন পশু সংগ্রহ করলেই চলবে। খামারের অন্যান্য ব্যবস্থাপনা ঠিক থাকলে খামার মুনাফা দেখবে আশা করা যায়।
৪ #জমি_নির্বাচন_ও_অবকাঠামো পরিকল্পনা: খামারের জন্য নিজস্ব জমি হলে সবথেকে উত্তম।
তাছাড়া আপনি জমি লিজ বা কট
(যে এলাকায় যে চুক্তিতে জমি ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে) নিয়ে খামার শুরু করতে পারেন।
খামারের অবকাঠামো এবং ঘাসের জমির জন্য খামারের ধরণ এর উপর নির্ভর করে কি পরিমান জমি প্রয়োজন। যদিও ঘাসের বিকল্প খাদ্য উৎপাদনের ব্যবস্থা করতে পারলে ঘাসের জমি কিছুটা কম হলেও সমস্যা নাই।
নিরাপত্তার বিষয়টি খুব গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করতে হবে।
জমি নির্বাচনের পর খামারের অবকাঠামোর একটা খসড়া পরিকল্পনা করতে হবে।
কোন ধরনের উপকরণ দিয়ে কম খরচে আধুনিক অবকাঠামো তৈরি সম্ভব সে বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। দেশীয় উপকরণ ব্যবহার একটি উত্তম পন্থা হতে পারে।
খামারের জন্য নির্বাচিত জমি অবশ্যই লোকালয় থেকে দূরে হতে হবে এবং অবশ্যই সংযোগ সড়ক, পানি, বিদ্যুতের সুব্যবস্থা থাকতে হবে। নিরাপত্তার বিষয়টি খুব গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করতে হবে।
৫ #পরিকল্পনা_প্রণয়ন: এ পর্যায় এসে পরিকল্পনা প্রণয়নের কাজে হাত দিতে হবে। তার আগে কোন পশু দিয়ে (গরু, ছাগল, ভেড়া বা) খামার শুরু করতে হবে তা নির্ধারণ করে সেই পশু সম্পর্কে পড়াশোনা শুরু করতে হবে।
সেই পশুর সাধারণ বৈশিষ্ট্য, প্রজনন কাল, উৎপাদন ক্ষমতা, স্বাস্থ্য, খাদ্য গ্রহণ, আচার-আচরণ সম্পর্কে বিস্তর ধারনা নিতে হবে। সে কারণে নিজে নিজের প্রশিক্ষক হওয়া যথেষ্ট। কোন ট্রেনিং করার দরকার নেই।
ইন্টারনেটের সুবাদে এই সমস্ত তথ্য এখন হাতের নাগালে। সময় নিয়ে মনোযোগের সাথে পড়াশোনা করে এবং খামার ব্যবসা সংক্রান্ত অন্যান্য তথ্যাদি সংগ্রহ করে দুই বছরের একটি রোডম্যাপ তৈরি করতে হবে। পরবর্তীতে সেই রোডম্যাপ ধরে এগোতে হবে।
খামারের পরিকল্পনাটি হাতে আসার পর খামারের কাজ শুরু করে দিতে হবে ধাপে ধাপে। সবার আগে বিনিয়োগের বিষয়টি পরিষ্কার হওয়াটা জরুরী।
#পশুর_চিকিৎসা:- চিকিৎসা ব্যবস্থা আমাদের দেশে এখনো সে ভাবে হয়ে উঠেনি নিকটস্থ ভেটেরিনারি চিকিৎসক এর সাথে যোগাযোগ রাখতে হবে তাদের সাথে বিভিন্ন রোগ এর বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে হবে প্রাথমিক কিছু চিকিৎসা ব্যবস্থা শিখতে হবে প্রয়োজনীয় কিছু ঔষধ এর ব্যবস্থা করতে পারলে বেশি ভালো হয়।
একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলে শেষ করব।
আপনি যদি খামার শুরু করতে চান তবে সবার প্রথমে আপনার নিজের সাথে বোঝাপড়া করতে হবে যে আপনি কি শখের খামারী হতে চান নাকি সত্যিকারের খামার উদ্যোক্তা। যদি আপনি প্রকৃত খামারী হতে চান তবে উপরের লেখাটি আপনার জন্য।
সংগ্রহ www.somewhereinblog.net
It is really informative visit here
ReplyDelete