গবাদিপশুর মোটাতাজাকরণে ইউরিয়া মোলাসেস মিশ্রিত

গবাদিপ্রাণী মোটাতাজাকরণে ইউরিয়া শোধিত খড়ের উপকারিতা ও কিছু সাবধানতা!!

May 27, 2018প্রথম পাতা, প্রাণিসম্পদ।

বছর ঘুরে আবারো এসেছে মাহে রমজান। দেখতে দেখতেই চলে আসবে ঈদুল ফিতর। তার পড় ঈদুল আযহা বা কোরবানির ঈদ। আর এই কোরবানির ঈদ কে লক্ষ্য করে যারা গবাদিপ্রানী মোটাতাজাকরন প্রকল্প হাতে নিতে চান তার উপযুক্ত সময় এখনই।

গবাদিপ্রানী মোটাতাজাকরন প্রকল্পে অনেকে ইউরিয়া শোধিত খড় বা ব্লক খাইয়ে থাকেন। এই ইউরিয়া নিয়েই আমাদের এই প্রতিবেদন।

ইউরিয়ার উপকারিতা-
প্রাণী দেহের সুষ্ঠু বিকাশ এবং সুস্থতার জন্য সুষম খাদ্যের জন্য। সুষম খাদ্যের ৬ টি উপাদানের মধ্যে অতীব প্রয়োজনীয় একটি হল আমিষ বা Protein. গবাদিপ্রানীর আমিষের যোগান দিতে আমরা বিভিন্ন শস্যদানা খাইয়ে থাকি যার অধিকাংশই ব্যায়বহুল। কিন্তু, আমিষের উৎস হিসেবে ইউরিয়ার ব্যবহার করা যায় যা খুবই সুলভ এবং কার্যকরী।

ইউরিয়া হল অ-আমিষ নাইট্রোজেন মিশ্রণ। এই ইউরিয়ার নাইট্রোজেন অংশই রুমেন অণুজীবদের (Rumen Microbes) দ্বারা উৎপাদিত আমিষের মূল উপাদান হিসেবে কাজ করে থাকে। উৎপাদিত এই আমিষ পরবর্তীতে প্রাণীদেহে স্বাভাবিক পরিপাক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শোষিত হয়। অধিকাংশ ইউরিয়া ৪৫% নাইট্রোজেন ধারন করে যেখানে আমিষে নাইট্রোজেনের পরিমাণ ১৬%। সেই হিসেবে ইউরিয়া যখন আমিষে পরিণত হয় তখন ইউরিয়ার অপরিশোধিত আমিষের পরিমাণ (Crude protein Value) হয় ২৮১%।

বিষক্রিয়া কখন হয়?
গরু এবং অন্যান্য গবাদি প্রাণী ইউরিয়াকে আমিষে পরিণত করে অ্যামোনিয়া ও কার্বন ডাই অক্সাইড তৈরির মাধ্যমে। উৎপাদিত এই অ্যামোনিয়া দিয়ে রুমেন অণুজীবরা আমিষ তৈরি করে। কিন্তু, বেশী পরিমানে ইউরিয়া গ্রহন করলে অতিরিক্ত অ্যামোনিয়া তৈরি হয় যা রক্তের মাধ্যমে কলিজায় গিয়ে পুনরায় ইউরিয়ায় পরিণত হয় এবং পরে মুত্রের মাধ্যমে বেরিয়ে যায়। কিন্তু ইউরিয়ার পরিমাণ খুব বেশী হলে রক্তে অ্যামোনিয়া ও ইউরিয়ার পরিমাণ এত বেড়ে যায় যা বিষক্রিয়া তৈরি করে।

গবাদি প্রাণীর প্রতি কেজি দেহের ওজনের জন্য ইউরিয়ার স্বাভাবিক মাত্রা ০.১ গ্রাম। কিন্তু এটা ০.৩ – ০.৫ গ্রাম হলেই বিষক্রিয়ার লক্ষণ দেখা দেয়। আর, এর মাত্রা প্রতি ১.৫ গ্রাম বা তার বেশী হলে তা গবাদি প্রাণীর জন্য প্রাণঘাতী।

ইউরিয়া বিষক্রিয়ার কারণ সমূহঃ
১। মাত্রাতিরিক্ত ইউরিয়া খাওয়ানো।
২। হঠাৎ করে বেশী পরিমাণে ইউরিয়া খাওয়ানো।
৩। অনিয়মিত ইউরিয়া খাওয়ানো।
৪। ভেজা খাবারের সাথে ইউরিয়া খাওয়ানো।

ইউরিয়া বিষক্রিয়ার লক্ষণ সমূহ-
১। কান এবং মুখের মাংশ পেশীর মৃদু টান।
২। দাঁত কড়মড় করা।
৩। ফেনাযুক্ত লালা।
৪। পেট ফাঁপা, পেট ব্যথা।
৫। বারবার মূত্র ত্যাগ।
৬। জোরপূর্বক ঘন ঘন শ্বাসপ্রশ্বাস ।
৭। দুর্বল, টলটলায়মান।
৮। গর্জন করা, কুস্তি করা।

ইউরিয়া বিষক্রিয়া প্রতিরোধে করণীয়-

১। যেসব গবাদি প্রাণীকে পূর্বে ইউরিয়া খাওয়ানো হয়নি সেক্ষেত্রে বিশুদ্ধ লবণ দিয়ে শুরু করতে হবে। পরবর্তীতে ধীরে ধীরে পর্যায়ক্রমে ইউরিয়া খাওয়ানো শুরু করতে হবে। গবাদি প্রাণীর জন্য ইউরিয়ার সর্বোচ্চ মাত্রা হল ০.১ গ্রাম/কেজি দেহের ওজন/ দিন।
২। একবার খাওয়ানো শুরু করলে এটা নিশ্চিত করতে হবে যেন প্রতিদিন ইউরিয়া খাওয়ানো হয়।
৩। যদি কোন কারনে কিছুদিন ইউরিয়া বন্ধ থাকে, পুনরায় নতুন করে শুরু করতে হলে কম মাত্রায় শুরু করতে হবে।
৪। মাত্রাতিরিক্ত ইউরিয়া গ্রহন প্রতিরোধ করতে হবে।
৫। ইউরিয়া মিশ্রণ বা ব্লক যেন ভিজে না যায় তা যেকোনো ভাবে প্রতিরোধ করতে হবে।
৬। খাবার তৈরি করার আগে খাবারে পর্যাপ্ত বিপাকীয় শক্তির উৎস রাখতে হবে।
৭। গবাদি প্রাণীর দৈনিক মোট প্রয়োজনীয় আমিষের ১/৩ ভাগ ইউরিয়া খাবারে সরবরাহ করতে হবে। এর বেশী কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
৮। খাবারে ইউরিয়া সমসত্তভাবে মিশ্রিত করতে হবে এবং কোন ইউরিয়া যেন দলা বেঁধে না থাকে।
৯। উপবাসে থাকা এবং অপুষ্টি আক্রান্ত প্রাণীকে ইউরিয়া খাওয়ানো উচিৎ নয়।

চিকিৎসা–
ইউরিয়া বিষক্রিয়া বুঝতে পারলে বা সন্দেহ হলে তৎক্ষণাৎ রেজিস্টার্ড ভেটেরিনারিয়ানের পরামর্শ নিন।

ডা. মোঃ জাহাঙ্গীর আলম

ডিভিএম, এম এস ইন প্যাথোলোজি (বশেমুরকৃবি)

No comments

Powered by Blogger.