পাকচং ঘাসের পরিচিতি

পরিচিতি :
থাইল্যান্ড এর 'নাখন রাতচাসিমা' প্রদেশের পাকচং নামক জায়গায় অবস্থিত থাইল্যান্ড 'ডিপার্টমেন্ট অফ লাইভস্টক' এর গবেষণাগারে উদ্ভাবন বলে জায়গার নাম এর মিল রেখে থাইল্যান্ডে এর নামকরণ করা হয়েছে পাকচং -১

  

ইতিহাস:
পুরো পৃথিবীর লাইভস্টক শিল্প যখন উচ্চ ফলনশীল ঘাস এর অভাবে হিমশিম খাচ্ছিলো তখনি "ডিপার্টমেন্ট অফ লাইভস্টক (ডি এল ডি) থাইল্যান্ড" এর পুষ্টিবিজ্ঞানী 'কারাইলাস কিয়োথং' সাধারণ নেপিয়ার ঘাস (Pennisetum purpureum) এবং মুক্তা বাজরা (Pennisetum glaucum) ক্রস এবং টিস্যু কালচার এর মাধ্যমে উদ্ভাবন করেন | এই জাতটি সাধারণ নেপিয়ার এর চেয়ে প্রায় দ্বিগুন ফলনশীল এবং অধিক পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ। মাত্র ৫ বছর আগে উদ্ভাবন করা পাকচং-১ ঘাস এখন থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন, মালয়েশিয়া সহ দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার সব থেকে জনপ্রিয় পশু খাদ্য।

বৈশিষ্ট :
এই নতুন সংকর নেপিয়ার ঘাসের নিন্মলিখিত বৈশিষ্ট যেমন –

দ্রুত বর্ধনশীল এবং উচ্চ ফলনশীল জাত ৬০ দিন বয়সী গাছ প্রায় ১০ ফুট লম্বা হয়. এই সুপার নেপিয়ার বা Pakchong এক হেক্টরে এক বছরে উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ৫০০ টন |প্রতি ৪৫ থেকে ৬০ দিন কাটা সম্ভব|এ জাতটিতে রয়েছে উন্নত প্রোটিন কন্টেন্ট, যা প্রায় ১৬ থেকে ১৮ শতাংশ |অত্যন্ত সুস্বাদু, সাধারণ নেপিয়ার থেকে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য হলো এ ঘসের পাতায় একটি sweeter স্বাদ আছে এবং মসৃণ হয়.|

উপযুক্ত জমি ও চাষের সময় :
পানি নিষ্কাশনের জন্য ভাল ব্যবস্থা আছে অর্থাৎ যেখানে বৃষ্টি বা বর্ষার পানি জমে থাকে না এরূপ উচু জমি পাকচং-১ চাষের জন্য উত্তম। প্রায় সব ধরনের মাটিতেই এ ঘাস রোপন করা যায়, তবে বেলে-দোআঁশ মাটি সবচেয়ে বেশি উপযোগী। পাকচং-১ এর উদ্ভাবক ডঃ কারাইলাস কিয়োথং বলেন, যে জমিতে যত বেশি জৈব উৎপাদান থাকবে সেখানে পাকচং -১ ঘাস ফলন ততো ভালো হবে। পাকচং-১ ঘাস সারা বৎসরই রোপন করা যায়। সাধারণতঃ বর্ষা মৌসুমেই রোপন করা ভাল। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে প্রথম বৃষ্টির পর জমিতে চারা বা কাটিং লাগালে প্রথম বছরেই ৩/৪ বার পর্যন্ত ঘাস কাটা যেতে পারে। চারা বা কাটিং লাগানোর পর যদি রৌদ্র হয় বা মাটিতে রস কম থাকে তাহলে চারার গোড়ায় পানি সেচ দিতে হবে।

চাষের পদ্ধতিঃ
সমতল জমিতে চাষ ও মই দিয়ে জমি আগাছা মুক্ত করতে হবে। জমিতে বেশী পরিমাণ পচা গোবর বা যেকোন জৈব সার দিয়ে মাটিতে ভালো ভাবে মিশিয়ে জমি প্রস্তত করতে হবে। জমি প্রস্তত করার দুই সপ্তাহ পরে ঘাস রোপণ করতে হবে। এই ঘাস আখের কাটিং-এর মত কাটিং অর্থাৎ কান্ডের দুই মাথায় কমপক্ষে দু'টি গিট রেখে কাটতে হবে। এক সারি হতে অন্য সারির দূরত্ব ৪ ফুট এবং এক চারা হতে অন্য চারার দূরত্ব ৩ ফুট। কাটিং ৬-৮ ইঞ্চি গভীরে রোপন করা উচিত। একটি গিট মাটির উপরে, অন্য একটি গিট মাটির নীচে রেখে মাটির সাথে ৩০ ডিগ্রি কোনে চারা বা কাটিং লাগাতে হয়। উন্নত জাতের ঘাসের ফলন বেশি পেতে হলে জমিতে প্রয়োজন অনুসারে রাসায়নিক সার দিতে হবে। জমির গুণাগুণের উপর নির্ভর করে সার ও পানি সেচ দিতে হবে। বর্ষাকালে পাকচং এর উৎপাদন ভাল হয়। বৎসরে কমপক্ষে দু'বার মাটি আলগা করে দিতে হবে।

ব্যবহার:
সুপার নেপিয়ার শুধুমাত্র গবাদি পশুর জন্য নয়, এটি তেলাপিয়া মাছ, পাতিহাঁস, মুরগি ও শুকরকে খাওয়ানো হয়. মাছ এবং ছোট প্রাণী জন্য ভাল ফলাফল পেতে ৪৫ দিন বয়সী ঘাস হতে হবে এবং পাতা বা কান্ড ছোট টুকরা করে কেটে দিতে হবে। উচ্চ প্রোটিন মান, শ্রেষ্ঠ বিধিবদ্ধ বজায় রাখার জন্য কাটার পরে উচ্চ আর্দ্রতায় সংরক্ষণ করতে হবে.

সতর্কতা : 
যেহেতু সার দেয়ার পর পাকচং ঘাসের মধ্যে টক্সিক নাইট্রোজেন জমা হয় তাই জমিতে সার প্রয়োগের প্রয়োগের পরে ১০-১৫ দিন ঘাস খাওয়ানো যাবেনা। এছাড়া বর্ষকালে প্রথম বৃষ্টির পর অথবা বজ্রপাতের পর পশুকে ২/১ দিন ঘাস খাওয়ানো যাবেনা। আর এই সময় যদিও ঘাস খাওয়াতে হয় তাহলে ঘাস কাটার পরে একদিন রোদে রেখে তারপর খাওয়াতে হবে। এছাড়া গরুকে খাওয়ানোর আগে ঘাস ভালো করে ধৌত করে খাওয়ানো উত্তম।

4 comments:

  1. সব চেয়ে ভাল কোন ঘাস

    ReplyDelete
  2. আমার জানা মতে পাকচং ঘাস অনেক ভল।

    ReplyDelete
  3. ১০ টি ছাগলের জন্য কত শতক জমিত নেপিয়ার রোপন করতে হবে?

    ReplyDelete
  4. তাহলে কি লাভ হল? ভুট্টাচাষ ই তো ভালো

    ReplyDelete

Powered by Blogger.