দুগ্ধজ্বর পশুর কি এবং কেন হয়

দুগ্ধজ্বর স্ত্রী পশুর প্রসবের সাথে সম্পর্কিত একটি বিপাকীয় রোগ। রক্তের ক্যালসিযামের মাত্রা কমে যাওয়া সাধারণ পেশীর দুর্বলতা ও চেতনা হ্রাস এ রোগের বৈশিষ্ট। রোগটিকে দুধজ্বর বলা হলেও আসলে কোন জ্বর থাকে না বরং তাপমাত্রা নিম্নগামী থাকে। 
রোগের কারণঃ 
প্রধানত রক্তে আয়োনাইজড ক্যালসিয়ামের মাত্রা হ্রাস পাওয়ার ফলে দুগ্ধজ্বর হয়। এর কারণগুলি নিম্নরূপঃ

গাভীরপরিপাকতন্ত্র ও অস্থি থেকে রক্তে শোষিত ক্যালসিয়ামের পরিমাণ ফিটাস ও কলষ্ট্রামের চাহিদার পরিমাণ থেকে অধিক কম হলে এ রোগ হয়।খাদ্যে যথাযথ ক্যালসিয়ামের অভাব, ক্ষুদ্রান্ত্রে অদ্রবণীয় ক্যালসিয়াম অক্সালেট লবণ সৃষ্টি, রক্তে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের স্বাভাবিক অনুপাতের (২, ৩: ১) এর ব্যাঘাত, ভিটামিন ডি এর অভাব ও অন্ত্রে প্রদাহের কারণে গর্ভাবস্থা ও কলষ্ট্রাম পিরিয়েডে গাভীর পরিপাকতন্ত্রে সুষ্ঠুভাবে ক্যালসিয়াম শোষিত হয়না। ফলে দুগ্ধজ্বর রোগ সৃষ্টি হয়।অস্থির সঞ্চিত ক্যালসিয়াম দ্রুত ও পর্যাপ্ত হারে বের না হওয়ার কারণে রক্তে ক্যালসিয়ামের স্বাভাবিক মাত্রা বজায় থাকে না। ফলে রোগ সৃষ্টি হয়।
রোগের লক্ষণঃ

আক্রান্ত পশুতে প্রথমে ক্ষুধামন্দা ও পরবর্তীতে অস্থির ও উত্তেজিত ভাব লক্ষ্য করা যায়।পশু নড়াচড়া করতে পারেনা, বিশেষ করে পিছনের পায়ের জোর কমে যাওয়ায় চলনে অসামঞ্জস্যতা দেখা দেয়। একপর্যায়ে গাভী শুয়ে পড়ে।দেহের তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকে বা খুব সামান্য জ্বর দেখা যায়।আক্রান্ত পশু অবসাদ গ্রস্থ ভাবে দেহের একপাশে মাথা গুজে শুয়ে থাকে।দেহের তাপমাত্রা ৯৭ ডিগ্রি ফাঃ পর্যন্ত হ্রাস পায়, হৃদস্পন্দনের গভীরতা হ্রাস পায়,নাড়ীর গতি বেড়ে যায়, শ্বাস-প্রশ্বাস ধীর-গভীর ও অনিয়মিত হয়, চোখের তারা প্রসারিত হয় এবং চোখ শুস্ক ও স্থির দৃষ্টি দেখায়।সঠিক সময়ে চিকিৎসা না হলে একপর্যায়ে গাভী অজ্ঞান হয়ে পড়ে, রুমেনের স্পন্দন বন্ধ হয়ে যায়, নাড়ী পাওয়া যায় না, হৃদস্পন্দন অস্পষ্ট হয়ে পড়ে এবং ১২-২৪ ঘন্টার মধ্যে গাভী মারা যায়।প্রসবের পূর্বে এ রোগ হলে বাচ্চা হওয়া বন্ধ হয়ে যায় এবং বাচ্চা জরায়ুর মধ্যে মারা যায়।

প্রতিরোধ ব্যবস্থাঃ

গর্ভাবস্থায় শেষ ৫ সপ্তাহ অল্পমাত্রার কালসিয়াম যুক্ত খাদ্য বা এসিড প্রকৃতির খাদ্য প্রদান করা উচিত। এসমযকালে খাদ্যের সাথে পরিমাণ মতো Calcium Powder (ক্যাল-পি) পাউডার পানির সাথে মিশিয়ে দুই বেলা খাওয়াতে হবে।গভাবস্থায় Vitamin-ADE খাওয়ালে ভাল ফল পাওয়া যায়।পশু যাতে কাত হয়ে না শোয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে কারণ একপাশে ভর করে শুয়ে থাকলে নিউমোনিয়া হতে পারে।

চিকিৎসাঃ

ভেটেরিনারি চিকিৎসকের পরামর্শে নিন্মলিখিত ব্যবস্থাদি গ্রহণ করা যেতে পারেঃ-

শিরার মাধ্যমে ক্যালসিয়াম বোরোগ্লকোনেট প্রয়োগ করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.