ছাগল -ভেড়ার ক্ষুদ্র খামার থেকে লাভবান হবার ব্যবস্থাপনা কৌশল
👉আজকের বিষয়
ছাগল-ভেড়ার ক্ষুদ্র খামার থেকে লাভবান হবার ব্যবস্থাপনা কৌশল অবলম্বন
---------------------------------------------------------
নুরে মদিনা ছাগলের খামার
টাকা দিয়ে আপনি খামারে ভাল ডাক্তার আনতে পারবেন, হরেক রকমরের ওষুধ কিনতে পারবেন, বিভিন্ন প্রকার দানাদার আর বাহারী প্যাকেটে মিনারেল-ভিটামিন ও কিনতে পারবেন । কিন্তু খামার পরিচালনার জন্য যে বিষয়টা সবচেয়ে জরুরী, তা আপনি টাকা দিয়ে রেডিমেট কিনতে পারবেন না। আপনাকে টাকা খরচ করে শিখতে হবে, অথবা ভাল কোন খামার ব্যবস্থাপনার কৌশল দিকগুলো অনুসরন করা বা সে অনুযায়ী নিজের মত সাজিয়ে নিতে পারবেন। অনেক দিন পর আজকের এই লেখাটা সেই সব ক্ষুদ্র খামারীদের জন্য যারা খামার পরিচালনা করতে গিয়ে আগাতে পারছেন না বরং খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছেন। আশা করি লেখাটা ভাল লাগবে, আর লাগলে নিচে কমেন্ট করে মতামত জানাবেন আর শেয়ার করে অন্যকে জানার সুযোগ করে দিবেন।
ক্ষুদ্র খামার থেকে লাভবান হতে আপনাকে খামার ব্যবস্থাপনার নিম্নের বিষয়ের উপর বেশি করে জোর দিতে হবে।
1/ খাবার ব্যবস্থাপনা
2/ সঠিক ছাগল ভেড়া নির্বাচন
3/ দক্ষ বাজার ব্যবস্থাপনা
4/ খামারকে ব্যাবসায়িকভাবে চালানো
5/ উন্নতির দিকগুলো খুজে বের করা
6/ খামার মালিক নিজে কাজ করা
1/খাবার ব্যবস্থাপনা: খাবার হলো খামারের জন্য সবচেয়ে বড় খরচের দিক। তাই এখানে সঠিক ব্যবস্থাপনা দরকার। নিম্নে খাবার ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হলো-
1/1:যেমন ঘাস উৎপাদন: খামার করতে কোনটা আগে-ঘাস? না ছাগল-ভেড়া? আমি বলবো আগে চাই ঘাসের যোগান নিশ্চিত, পরে ছাগল-ভেড়া। প্রশ্ন আসতে পারে নেপিয়ার/পাকচুং, জাম্বু, ভূট্টা ঘাস দিয়ে হবে তো? আমি বলবো, না ১০০% হবে না। একটা ঘাস দিয়ে অন্তত: ছাগল পালা যাবে না। আর পালা গেলেও লাভ হবে না। বিভিন্ন জাতের ঘাস দরকার ওদের পুষ্টিমান রক্ষা করতে।
ঘাসের জাত
1/2 ঘাসের জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার: শুধু জমি থাকলেই হবে না, জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে হবে। ফলে আপনি একই জমি থেকে নানাবিধ ঘাসের যোগান নিশ্চিত করতে পারবেন।
1/3 মাটি পরিক্ষা: যে জমিতে ঘাস চাষ করবেন, সে জমির মাটি পরিক্ষা করে নিতে হবে। কেননা সকল জমিতে মাটির গুনাগুণ একই মানে থাকে না। যেমন ধরুন কোন জমিতে যদি ফসফরাসের পরিমান কম থাকে তাহলে পশুর খাবারেও ফসফরাসের ঘাটতি থাকবে। পশুর খাবারে মাইক্রো ও ম্যাক্রো মিলে প্রায় ১৮-১৯টা মিনারেল-ভিটামিন লাগে যা পশু ঘাসের মাধ্যমে প্রায় সব পেতে পারে। তাই মাটি পরিক্ষা করে সে অনুযায়ি ঘাসের চাষ করতে হবে।
1/4রেশন ব্যালেন্স: সব বয়সের সব পশুর একই খাবার দিলে হবে না। বরং তাদের ওজন, বয়স, গর্ভধারনের স্টেজ ভেদে খাবারের পরিমান ও প্রকারভেদ থাকতে হবে। যেমন ধরুণ একটা ছাগির গর্ভের ভ্রুন 3.5 মাসে 30% হয় বাকি 70% বৃদ্ধি পায় শেষের 1.5 মাসে। তাই শেষের দেড় মাসে তাদের খাবার লাগবে বেশি সাথে পুষ্টিমান ও নিশ্চিত করতে হবে। আবার ধরুন 1.5-2 মাসের বাচ্চার খাবার লাগে খুব কম কিন্তু প্রোটিন % থাকা দরকার অনেক হাই। মুলকথা খাবার রেশন হতে হবে ব্যালেন্সিং, তবে সিম্পল।
1.5 বিকল্প খাবার: বাজারের খাবারের দাম কখনোই কমবে না বরং দিনে দিনে বেড়েই চলবে। তাই আপনাকে বিকল্প খাবারের সন্ধান করতে হবে। যা আপনার আশে পাশেই আছে যেমন-নদীর চর, রাস্তার পাশ, উন্মুক্ত মাঠ (যখন ফসল থাকে না)। এছাড়াও বিনামূল্যে পাবেন-এ্যাজোলা, ডাকউইড যাতে প্রোটিন মাত্রা অনেক বেশি। তবে কোন খাবার একবারে বেশি দেয়া ঠিক না আস্তে আস্তে পরিমাণ বাড়াতে হবে।
1.6 খাবার সংরক্ষানাগার: মৌসুমে খাবারের দাম কম থাকে তাই সে সময় খাবার যেমন-ভূট্টা কিনে রাকা যেতে পারে। আবার যখন অনেক ঘাস উৎপাদন হয়, তখন তা হে বা সাইলেজ করে রাখতে হবে।
2. সঠিক ছাগল-ভেড়া নির্বাচন করা: সংখা নয়, খামারের জন্য সঠিক ছাগল-ভেড়া নির্বাচন করতে পারা একজন খামারীর অন্যতম প্রধান কাজ। চ্যালেন্জ ও বটে। কারন ভাল ছাগল-ভেড়া বাজারে খুজে পাওয়া যাবে না। এ কাজটা আপনাকে সতর্কতার সাথে ধীরে ধীরে করতে হবে। no কোয়ালিটি no চয়েজ for ফার্মিং!
2.1 কালিং বা বাদ দেয়া: পশুর প্রতি ভালবাসা না থাকলে যেমন খামার হবে না আবার পশুর প্রেমে পড়ে গেলে আবার ব্যবসা হবে না। অর্থাৎ যা খামারের জন্য কোন লাভ বয়ে আনছে না তা যেমন বাদ দিতে হবে, তেমনি যা শুধু আপনার খরচ বাড়াচ্ছে তাও খামার থেকে বাদ দিতে হবে। প্রতি বছর খামার থেকে কম পক্ষে 10-15% পশু বাদ দিতে হবে, এবং নতুন করে ভাল মানের পশু খামারে নিযুক্ত করতে হবে।
2.2 ভাল পশুর অন্তর্ভূক্তকরণ: খামারে প্রতি বছর সঠিকভাবে বাচ্চা বেশি দেয়, মায়ের দুধ বেশি হয়, বাচ্চার মূত্যু হার কম, বাচ্চার গ্রোথ বেশি এমন সব পশু খামারের জন্য নির্বাচন করতে হবে। আমার মতে ক্রোস ব্রিডিং এর মাধ্যমে পশুর গুনাগুণ বৃদ্ধি করে খামারকে লাভবান করা সম্ভব।
ক্রোস ব্রিডিং পাঠা যেমন তোতা পুরী। যমুনা পুরী। হরিয়ানা ইত্যাদি ইত্যাদি
3. দক্ষ বাজারজাত করন: সব সময় পশুর মূল্য সমান থাকে না। তাই সময় ও মাস বুঝে পশু বাজারজাতকরণ করতে হবে। যেমন-রোজা, কুরবানি, বিবাহ, ধর্মীয় অনুষ্ঠান ইত্যাদি। এটা না করতে পারলে ব্যবসা করা কঠিন হয়ে যাবে। তাছাড়া আপনার আশে পাশের বিভিন্ন অনুষ্টানে গোসত সরবরাহ করে বেশি লাভ করতে পারবেন, যেহেতু আপনি সরাসরি তাদের ভাল মানের পশু দিচ্চেন যথা সময়ে যথাযথভাবে।
4.খামারকে ব্যাবসায়িকভাবে চালানো: ব্যবসার কিছু মুলনীতি বা হিসাব নিকাশ আছে। শখের তা নেয়। শখ করে তাই বারমাস বেশি বেশি দানাদার খাওয়ালে কোন ক্ষতি নেয়। কিন্তু ব্যবসা করতে হলে আপনাকে প্রতি ছাগল-ভেড়ার জন্য বছরে কি পরিমান খরচ হচ্ছে, কি পরিমান লাভ হচ্ছে তার হিসাব নিকাশ থাকতে হবে। তবে কি পরিমান বাচ্চা খামারে জন্ম নিচ্ছে সেটা মুল কথা নয় বরং কি পরিমান বাচ্চা বাজারজাত করতে পারছেন সেটাই আসল কথা।
5. উন্নতির দিকগুলো খুজে খুজে বের করে উন্নতি করা: খামার মানে শেষ নয়, নদীর মত চিরবহমান। প্রতিনিয়ত উন্নয়ন লাগবে সেখানে। তাই অনুসন্ধিৎসু চোখ দিয়ে সব সময় খামারকে দেখতে হবে, যেটা আপনি মনে করবেন এটা উন্নয়ন করা দরকার তা করে ফেলবেন।
মনে রাখবেন-’টাকা উপার্জনের জন্য টাকা ব্যয় করতে ভীত হবেন না’
সবাইকে ধন্যবাদ
Noore Madina goat farm
রাজি
ReplyDeleteভাল তথ্য। কিন্তু নিজের নামে চালিয়ে দিলেন লেখাটা!! আসলে লেখাটা নাজ ফার্মের
ReplyDelete